” মৃত্যু “
অতিশ মজুমদার :
ধরণীতে মিথ্যে সুখের বিশ্বাসে, শয়তানের আশ্বাসে, মোহগ্রস্ত মানুষরা রক্তের উষ্ণতাহীন হয়ে বেঁচে রয় এই পৃথিবীতে। একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হলো মৃত্যু ভয়! অবচেতন মনে মৃত্যু চিন্তা এবং মৃত্যু যন্ত্রণা।
কিন্তু একটি দেশ কতৃক নিয়োজিত তাদের আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখতে বিভিন্ন আধাসামরিক, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণপর্ব থেকেই তাদের নিজেদের মৃত্যুর সাথে প্রতি মুহূর্তে মোকাবেলা এবং সাক্ষাতের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে অভ্যস্থ করা হয়। এক পর্যায়ে মৃত্যু ভয় তাদের কাছে খুবই তুচ্ছ মনে হয়। এভাবেই একটা সময় এই মৃত্যু নামক চিরসমাপ্তি তাদের দৃঢ়চিত্তে এতোটাই ইস্পাতসম মজবুত বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয় যে, যেন এই পেশাটাই সার্বক্ষণিক তাদের জীবন মৃত্যুর মাঝে আলো ছায়ার অপূর্ব এক অদ্ভুত খেলা।
সালাম জানাই বিশ্বের সকল যোদ্ধা, মহান বীর সেনানী দের, যারা দেশমাতৃকার সেবার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি বাহিনীর স্বস্বশ্র প্রশিক্ষন কালীণ সময়ে, যার যার ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী, সকল প্রশিক্ষনার্থীগণ তারা সকলেই যার যার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ পূর্বক শপথ গ্রহন করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। অধিকাংশ সময় তারা তাদের সকল ব্যাক্তি ইচ্ছা আকাঙ্খাকে স্ব ইচ্ছায় বলিদান করে, দেশ রক্ষার তাগিদে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মতো এমনই এক নির্মম জুয়া খেলার একজন পাকা জুয়ারি হিসেবে সবসময় জীবন বাজবর হার জিতের বাজিমাতে মেতে থাকে।
নায়ক বলতে সচরাচর সবাই পর্দায় অভিনয় করে দুষ্ট শক্তিকে দমনকারী ব্যাক্তীকেই বুঝে।
তবে বাস্তব জীবনের নায়ক সম্পর্কে অনেকের দূর্বল অভিজ্ঞতা।
আসলে রিয়েল লাইফে দেশ জাতি জনগণ, সব মিলিয়ে আমাদের সকলের চোখে তো এরাই আসল নায়ক। কারন এটা তো কোন মুভি কিংবা ভিডিও গেম অথবা কারোর তাচ্ছিল্যের বিপরীতে কেটে যাওয়া কোন হেঁয়ালিপূর্ণ জীবনের রঙ্গ রসিকতার স্টেজও কিন্তু এটা নেয়! বাস্তবে এটা একটা বাস্তবিক যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে মৃত্যু প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে লুকোচুরি খেলা খেলে। এরই মধ্যে তারা টিকে থাকে টিকে রাখে আর টিকিয়ে রাখে আমাদের অস্তিত্ব।
এটাই একজন সৈনিকের বাস্তব জীবনের চরম সত্যি আর নির্মম বাস্তবতার প্রতি মুহূর্তের চিত্র। যা কখনো কখনো কোন কোন ক্ষেত্রে অতীতের রূপকথাকেও হার মানাতে যথেষ্ট। কারন তাদের প্রিয়জনের ডুকরে কান্নার আওয়াজ কখনো তাদের কানে পৌঁছাতে পারে না। প্রিয়জনের নয়ন ভেজা অশ্রু কখনো তাদের হৃদয়কে ধুয়ে মুছে কোমল করতে পারে না।
প্রশিক্ষণ মাঠে একজন দক্ষ প্রশিক্ষক উনার সকল প্রশিক্ষণার্থীদের সবার আগে একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তা হলো আমাদের যেই কোন জটিল/কঠিন পরিস্থিতির সম্মূখে আবেগের স্থান শুধুমাত্র আমাদের গায়ে জমে থাকা কিছু ধুলো বালির মতো!আর সবাইকে সর্বদা এটাই মাথায় রাখতে হবে। তাই ঐ সকল জমে থাকা ধুলোবালি গুলোকে শরীর থেকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দিতে হবে।
বনের হিংস্র সিংহের সম্মূখীন সর্বদা বন্দুক হাতে নিয়েই হতে হয়। যদি কেউ ভাবে হিংস্র সিংহকে তার আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে বশ করবে, এবং এমনটা ভেবে সে যদি তাকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সুন্দর সুন্দর মিষ্টি মধুর বাঁশির সুরে বিমোহিত করার চেষ্টা করে, তাহলে কি কোন লাভ হবে? কারন চোরে না শুনে কভু ধর্মের কাহিনী। এই পৃথিবীতে স্রষ্টার সকল সৃষ্টিই সকলেই, তাদের চরিত্রে স্রষ্টা প্রদত্ত আপন আপন চরিত্রেই উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। স্রষ্টার সৃষ্টি পরিবর্তন করার ক্ষমতা তো আর কোন মানুষের মধ্যে নেই।