নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন আগ্রাবাদ সংযোগ সড়ক ও পোর্ট কানেকটিং সড়কের কাজ নিয়মিত মনিটরিং করার কথা উল্লেখ করে বলেছেন এই সড়ক দু“টির কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য আমি নিয়মিত পরিদর্শন করি। এই প্রকল্পে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন,তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করি এবং এই দু’টি সড়কের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য আমি তাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাচ্ছি । তবে এই সড়ক দু“টি কাজ জাইকার অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে।
নগরীর ব্যস্ততম সড়ক হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদ সংযোগ সড়কের বেপারীপাড়া থেকে পোর্ট কানেকটিং রোড়ের দক্ষিণাংশ এবং পোর্ট কার্নেকটিং রোড়ের নিমতলা থেকে ওয়াপদা পর্যন্ত রাস্তার পূর্বাংশ ঈদের আগে কার্পেটিং লেয়ারের কাজ সম্পন্ন হবে বলে সভায় তিনি উল্লেখ করেন। রাস্তা দু“টিতে গাড়ী চলাচলের উপযোগী হয় এবং বর্ষার মৌসুমে জন চলাচলের ভোগান্তি লাঘবে চসিক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সোমবার দুপুরে চসিক কনফারেন্স হলে নাগরিক উদ্যোগ এর নেতৃবৃন্দ সাথে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন।
নাগরিক উদ্যোগ এর আহবায়য়ক আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন অনুষ্ঠানে ১৪টি দাবী সিটি মেয়রের নিকট উত্থাপন করেন এবং তা তিনি পড়ে শুনান। নাগরিক উদ্যোগ এর দাবীগুলো তুলে ধরা হলো। এ দাবীগুলোর মধ্যে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এবং নিমতালা বিশ্বরোডের অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করার আহবান। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের আগেই উল্লেখযোগ্য কাজ শেষ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রচন্ড ধুলোবালিতে ঐ এলাকার জনজীবন এবং ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে, আরাকান সড়ক (বহদ্দারহাটের পর থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়টি দীর্ঘদিন যাবত ওয়াসার সংস্কার কাজের জন্য একপাশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলত: ঐ এলাকা দিয়ে চলাচলরত জনসাধারণের তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, নগরজুড়ে ওয়াসার খুড়োখুড়ি। চসিক এর সাথে কোন সমন্বয় নেই। ফলত নতুন রাস্তা করে যাওয়ার পর আবার খুড়ে পুরো রাস্তাটি নষ্ট করে দেওয়া হয়, বিমান বন্দরের প্রবেশ মুখ সমূহে কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো বিমান বন্দরকে পুরো চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে । যানজটের জন্য প্রতিদিনই বিমান মিস করছে যাত্রী সাধারন,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। অথচ আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কটি পুরোটাই বক্স কালভার্ট। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে পুরো বন্দরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে ,পর্যাপ্ত খেলার মাঠ এবং আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নচেৎ মোবাইল
গেমিং,ফেইসবুক এবং ইন্টারনেট নতুন প্রজন্মকে গ্রাস করে ফেলবে,নগরজুড়ে মশার ব্যাপক প্রজনন এবং উৎপাত। কিন্তু মশার প্রজনন বন্ধ এবং উৎপাত ঠেকাতে চসিকের কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই,নগরীর সড়কবাতি সমূহের যাচ্ছেতাই
অবস্থা। অনেক সময় দেখা যায় সারদানিব্যাপী সড়ক বাতি জ্বলে কিন্তু রাত্রে জ্বলে না। বর্তমানে রাস্তায় সড়কবাতির অবস্থা নাজুক। বিশেষকরে অলি গলিতে সড়কবাতি নাই বল্লেই চলে,বাজার মনিটরিংয়ে চসিক পিছিয়ে আছে বলা যায়। প্রতিটি বাজারের সামনে মূল্য তালিকার ডিজিটাল বোড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবেশনকারীদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার ব্যবস্থা করা,অলি গলির নালা ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। বিশেষ করে খাল কিংবা নদীর সাথে সংযোগকৃত নালাগুলো ময়লা আবর্জনা ভর্তি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যেগুলো জলাবদ্ধতার অন্যতম কারন হিসেবে বিবেচিত, প্রচুর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে কিন্তু নিম্নমানের উন্নয়ন কাজ। জনগণের সাথে ঠিকাদারের খারাপ আচরণ। বিশেষ কর অলিগলির সড়কগুলোর নির্মানকাজ খুবই নিম্নমানের, খোলা ট্রাকে করে আবর্জন পরিবহন। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় খোলা ট্রাকে আবর্জনা পরিবহন জনমনে অস্বস্থি বিরাজ করে, সিইপিজেড,কেইপিজেড এবং ঐ সকল এলাকায় অবস্থিত সরকারী বেসরকারী চাকুরীজীবিরা প্রতিদিন কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে প্রচুর বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। অফিস ছুটির সময় কোন প্রকার গণপরিবহন পাওয়া যায় না,লালখান বাজার ওয়াসা এবং জিইসি মোড়ে ফুট ওভার ব্রীজ স্থাপন রয়েছে। এক পর্যায়ে সিটি মেয়রকে উদ্দেশ্য করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন আপনি এই নগরীর অভিভাবক। সফলতা আর ব্যর্থতার সকল দায়ভার আপনার উপর। আপনার দায়িত্ব পালনে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাতত্মক সহযোগিতা থাকবে বলে তিনি সিটি মেয়রকে আশ্বস্থ করেন তিনি ওয়াসার রাস্তা কর্তন সম্পর্কে বলেন যে, ওয়াসার এই খোড়াখুড়িতে গোটা নগরী যেন একটি জীবন্ত কবরস্থান। তাই তিনি সারা শহরে একসংগে রাস্তা খোড়াখুড়ি না করে একটি রাস্তার কাজ শেষ করে, অপরটির কাজ শুরু করার জন্য
সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্টানের প্রতি পরামর্শ দেন জনাব সুজন।
নাগরিক উদ্যোগ এর নেতৃবৃন্দ নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সর্ম্পকে সিটি মেয়রকে অবহিত করার জন্য সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন দাবী -দাওয়া সমুহ অত্যন্ত সময়োপযোগী। একটি আধুনিক ও
বসবাসযোগ্য নগর গড়তে এই দাবী -দাওয়াগুলোর গুরুত্ব রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই দাবী দাওয়া মধ্যে অধিকাংশ দাবীর কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এর দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাবে বলে মেয়র
উল্লেখ করেন। নগরীর যানবাহনের শৃংখলা আনায়নের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এই সেক্টরের শৃংখলা আনা অসম্ভব । এর পাশাপাশি বাস ট্রাক মালিক- শ্রমিকদেরকে তাদের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন আরাকান রোড়ের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সড়ক উন্নয়নের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ৭১কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি হবে নগরীর একটি নানন্দিক সড়ক। সিটি মেয়র আরো বলেন নগরীর রাস্তা
খোড়াখুড়িতে আপনাদের মতো আমারও দুঃখ হয়।এতে নগরবাসীর চলাচলের ভোগান্তি হয় বেশী। এই সব প্রকল্পগুলো একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় বিধায় অনুমোদন না দিয়ে উপায় থাকে না। খেলাধুলা মাঠ সম্পর্কে সিটি মেয়র বলেন আমি নিজে একজন ক্রীড়া সংগঠক । এ নগরে প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেড়িয়ে আসুক, সেটা আমি প্রতিনিয়ত কামনা করি। আমি মনে করলে কি হবে -নগরীতে নেই খেলার মাঠ, নেই বিনোদনের পর্যাপ্ত জায়গা। তারপরেও চসিক আগ্রাবাদ এলাকায় শেখ রাসেল পার্ক নামে অপর একটি পার্ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের পারাপারের জন্য দু’টি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। একটি নির্মাণ করবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও অপরটি করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এ সময় নাগরিক উদ্যোগ এর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী মোঃইলিয়াছ, মোঃকামাল মেম্বার, হাজী হোসেন কোম্পানী, হাবিবুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল আজিম, এজাহারুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন বাহাদুর, মোঃ শাহজাহান, পংকজ চৌধুরী কংকন, জাহেদ আহমদ চৌধুরী,
সোলেমান সুমন, সমীর মহাজন লিটন, শেখ মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, সফি আলম বাদশা, স্বরূপ দত্ত রাজু, মোঃ ওয়াসিম, মাহফুজ চৌধুরী, শিশির কান্তি বল,শেখ সরওয়ার্দী এলিন, রকিবুল আলম সাজ্জী, রাজীব হাসান রাজন, এম ইমরান আহমেদ ইমু, দীপংকর সৌমশান্ত, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ প্রমূখ।