মোঃ নাসিম,নাচোল(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ-
চাঁপানবাবগঞ্জের নাচোলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শফিউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা,অনিয়ম,দুর্নীতি ও রামরাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছে সাধারণ কৃষকরা।অভিযোগে জানাগেছে,এবছর সরকার নাচোল উপজেলায় রবি মৌসুমে/বোরো মৌসুমে সাধারণ কৃষকদের কাছে থেকে প্রতি কেজি গম ২৮টাকা দরে এবং চাউল প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে ক্রয় করবে।একজন কৃষক কমপক্ষে ৩টন করে গম /চাউল খাদ্য গুদামে দিতে পারবে।কিন্তু সাধারণ কৃষকের নাম খাদ্য গুদামের তালিকায় থাকলে ও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা গম বা চাউল খাদ্যগুদামে দিতে পারছে না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শফিউর রহমানের যোগসাজসে ঐ সব কৃষকের নামের তালিকা দিয়ে উপজেলার ডিলার বা মিল মালিকরা খাদ্যগুদামে গম ও চাউল সরবারাহ করছে।ফলে সাধারণ কৃষকরা খাদ্য গুদামে চাউল বা গম দিতে পারছে না।
গত সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলা খাদ্য গোডাউন চত্বরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানার সভাপতিত্বে অভ্যান্তরীণ গম ও বোরো চাউল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের।
এ দিন উপজেলার কসবা ইউনিয়নের বাইলকাপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে কৃষক সেতাউর খাদ্য গোডাউন ৩টন গম দিতে এলে তাঁর কাছে টন প্রতি ১হাজার টাকা উৎকোচ চান খাদ্য গোডাউনের ওসিএলসডি শফিউর রহমান।সেতাউর রহমান ওসিএলএসডি শফিউর রহমান কে জানান,সরকার তো কৃষকদের কাছে নায্যমুল্যে গম ক্রয় করছে।আমার গম তো ভাল মানের।আপনাকে কেন টন প্রতি ১হাজার টাকা উৎকোচ দিব।পরে সেতাউর রহমান ওসিএলএসডি কে টন প্রতি ১হাজার টাকা উৎকোচ দিতে না পারায় তাঁর গম ফেরত দেন।
কসবা ইউপির সোনাইচন্ডী এলাকার জালাল নামের কৃষক অভিযোগ করে বলেন,খাদ্য গুদামের ক্রয়ের তালিকায় আমার নাম থাকলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আমার গম ক্রয় করছে না।তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গম ক্রয় করছে।আমরা সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
গোলাবাড়ি এলাকার সাইদুর ও পলাশের একই অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডির বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে বোরো মৌসুমে আমন চাউল সংগ্রহ করার নিয়ম না থাকলেও নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা না করে পঁচা,ধূলা মিশ্রিত আমন চাউল খাদ্য গুদামে কতিপয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রয় করছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শফিউর রহমান।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ধান ব্যবসায়ী স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন,নিয়ম বর্হিভুত ভাবে বোরো মৌসুমে খাদ্যগুদামে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানের পঁচা,পাথর মিশ্রিত ২ টন আমন চাউল ক্রয় করছে ওসিএলসডি।
পরে সেই অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা এদিন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলামের অফিসে গিয়ে পঁচা চাউল,পাথর মিশ্রিত আমন চাউল ক্রয়ের বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলাম তার সত্যতা খুঁজে পান।তিনি সাংবাদিকদের জানান,আমি ওসিএলসডি কে সেই পাথর মিশ্রিত গম ক্রয় না করার জন্য বলে দিয়েছি।পরে সাংবাদিকরা দুপুর ১২টায় খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখে যে,উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলাম ও ওসিএলসডি শফিউর রহমানের উপস্থিতিতে সেই পাথর মিশ্রিত আমন চাউল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা কে অবহিত করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান,সেই আমন চাউল ক্রয় না করার জন্য আমি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা গত সোমবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলামের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে তিনি বাংলা ভাইয়ের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার বাড়ি বাঘমারা।বাংলা ভাই আমার খুব কাছের লোক। কাজেই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে গেলে একটু আপনারা জেনে শুনে করবেন বলে তিনি সাংবাদিকের জানান। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলামের আচারন দেখে স্থানীয় সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলাম আসলেই বাংলা ভাইয়ের কোন সদস্য কিনা?
এ বিষয়ে কসবা ইউপির সোনাইচন্ডী এলাকার জালাল নামের কৃষক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,খাদ্য গুদামের ক্রয়ের তালিকায় আমার নাম থাকলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আমার গম ক্রয় করছে না।তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গম ক্রয় করছে।আমরা সাধারণ কৃষক জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করছি ।
এ বিষয়ে কৃষক সেতাউর রহমান জানান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শফিউর রহমান আমাদের সাধারণ কৃষকদের গম ক্রয় করছে না।কেননা,তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিল মালিকদের কাছে গম ক্রয় করছে।আর টন প্রতি ১ হাজার টাকা উৎকোচ নিচ্ছে।
উল্লেখ্য যে,গত মঙ্গলবার রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক রাজবার্তা ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক চাঁপাই দৃষ্টি সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় নাচোলে সাধারণ কৃষকদের কাছে উৎকোচ চাওয়ার অভিযোগ ওসি এলএসডির বিরুদ্ধে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।