শেখ মমিন ; ( রাজবাড়ী) :-
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ভোলাই মাতুব্বরের পাড়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুরীর বিরুদ্ধে এক সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (২১)কে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, নির্যাতনের ফলে গৃহবধূ গুরুতর অবস্থায় গত ৬ মে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় গত ৭ মে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় স্বামী লুৎফর শেখ , শ্বশুর নান্নু শেখ ও শ্বাশুরী হুসনেয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে ১১(গ)/৩০ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী-২০০৩ ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ভোলাই মাতুব্বরের পাড়া গ্রামের মো. নান্নু শেখের পুত্র মো. লুৎফর শেখের (২৫) সাথে প্রায় তিন বছর পূর্বে একই গ্রামের মো. নুরু মোল্লার কন্যা রিক্তা আক্তার (২১) সাথে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়েতে নগদ ১ লাখ টাকা যৌতুক, ১ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও ১লাখ টাকার আসবাবপত্র প্রদান করেন। বিয়ের পরে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
বিয়ের কিছুদিন শ্বশুর বাড়ীর লোকজন বিভিন্ন ভাবে যৌতুক দাবি করে রিক্তার পরিবারের কাছে। তার স্বামী লুৎফর শেখ , শ্বশুর নান্নু শেখ ও শ্বাশুরী হুসনেয়ারা বেগম পিতার বাড়ি থেকে চাহিদা মত যৌতুকের টাকা আনতে মত প্রকাশ না করায় ৫ মে রাতে রিক্তার উপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। এসময় রিক্তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা গুরুতর অবস্থায় রিক্তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
নির্যাতিতা গৃহবধূ রিক্তা আক্তার জানান, তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা বাহানায় যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় প্রায়ই আমাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো স্বামী ও শশুরবাড়ির লোকজন। গত ৫ই মে রাতে যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় স্বামী লুৎফর শেখ , শ্বশুর নান্নু শেখ ও শাশুরী হুসনেয়ারা বেগম আমাকে বেধরক মারপিট করে। এ সময় আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে উদ্ধার করে আমাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বের ২০১৯ইং তারিখে রাত ৭টার সময় রিক্তা অন্তঃসত্তা অবস্থায় তাকে শারীরিক নির্যাতন করে তার শ্বশুর বাড়ীর পরিবার। এ ঘটনায় গত ১৪/১১/১৯ তারিখে রাজবাড়ী বিজ্ঞ আদালতের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০)( সংশোধনী/২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১মাস ১০দিন পর ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে আপোশ হয়।
রিক্তার মা লাখী বেগম বলেন, রিক্তার স্বামী লুৎফর আমার কাছে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য দাবি করে আসছে, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় আমার মেয়ের ওপর প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালায় ।
রিক্তার বাবা নুরু মোল্লা জানান, আমি একজন কৃষক মানুষ, আমার কাছে পাচ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য দাবি করে, রিক্তার স্বামী লুৎফর, যৌতুকের টাকা দিতে না পাড়ায় আমার মেয়ের (রিক্তা আক্তার) ওপরে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালায় ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রিক্তার স্বামী লুৎফর শেখের মোবাইল ফোনে বার বার কল করা হলেও মাঝে মাঝে ফোনটি বন্ধ ও ফোন গেলেও রিসিভ হয়নি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও মামলা তদন্তকারী মো: নুরুল আমিন জানান, থানায় যৌতুকের মামলা হয়েছে, এখনো কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি, চেষ্টায় আছি হয়তো দুই একদিনের মধ্যেই আসামীদের ধরতে পারবো, তবে আসামীদের গ্রেফতার করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনবো।