জুনায়েদ হাসান ;( চট্টগ্রাম ):-
চট্টগ্রামের উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগে পরিকল্পিত মাষ্টারপ্লান প্রণয়নে সরকার সচেস্ট, এর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফূলী নদী রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর । আজ সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কর্ণফুলি নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দখল ও দূষণ রোধে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন,চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি একথা বলেন ।
মন্ত্রী বলেন, এই কর্ণফুলীর ৮০ কি.মি. স্থান জুড়ে অন্তত ৩ শটি কারখানা কিংবা শিল্প স্থাপনা রয়েছে। এসব কারখানা এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে কারখানার বর্জ্য নদীতে চলে আসার আশংকা রয়েছে। পেপার মিল, তেল শোধনাগার, পাওয়ার প্লান্ট, ট্যানারী, সার প্রস্তুত কারক, সাবান এবং সিমেন্ট তৈরীর কারখানা এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব কারখানার তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। থাকলেও এগুলোর ব্যবহার হচ্ছে কিনা তাও যাচাই বাছাই করা হবে। কর্ণফূলী রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে এই নগরীর মাস্টারপ্ল্যান করা হবে।
তিনি আরো জানান, সরকার প্রুতিশ্রুতি অনুযায়ী চট্টগ্রামের ৪১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় সবকটিতে ওয়াসার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করছে। দৈনিক ৪২ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন ৩৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিচ্ছে। চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহকরা ১ হাজার লিটার প্রতি পানির জন্য দাম দিচ্ছেন মাত্র ১২ টাকা ৪০ পয়সা, ঢাকায় যেটি ১৪ টাকা ৪৬
পয়সা। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও চট্টগ্রাম ওয়াসা চট্টগ্রামের ৪শ কি.মি. এলাকা নতুন সংযোগের আওতায় এনেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা যে প্রকল্পগুলো বাস্তবাবায়ন চলছে এসব সম্পন্ন হলে পানি ও পয়:নিস্কাশনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম একটি আধুনিক নগরে
পরিণত হবে। তিনি আরো জানান যে, শহরে প্রবেশ পথে কোন ডাম্পিং স্টেশন হবে না। চট্টগ্রামের ফয়’সলেক এলাকাকে অপরাধ মুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, কর্ণফূলী নদীর পাড় লিজ দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ কেন দিচ্ছেন আমি জানিনা। এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের স্বার্থে সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতেন। তাঁর মধ্যে বেসিক দেশপ্রেম ছিল এবং এটা প্রধানমন্ত্রী উপলদ্ধি করতেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর চট্টগ্রামের স্বার্থ রক্ষায় এভাবে আর কেউ ভূমিকা রাখেনি। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, চট্টগ্রাম দৃষ্টি নন্দন শহর হবে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সকল সুযোগ এই নগরীতে রয়েছে। আউটার রিং রোড, কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক করতে পারলে হাজার হাজার পাঁচ তারকা হোটেল হবে। এরজন্য রকেট সাইয়েন্সের দরকার হবে না। শুধু চট্টগ্রাম পর্যটন খাত দিয়ে পুরো দেশকে এগিয়ে নিবে। তবে অবকাঠামো যাতে আগামী দিনের দূর্ভাগ্য ডেকে না আনে সেব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক। তাই এত উন্নয়ন প্রকল্প ও টাকা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো দেবেন। যদি কাজে লাগাতে পারি। আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলতেন সিটি কর্পোরেশনকে আয়বর্ধক করতে হবে। তিনি করেও
গিয়েছিলেন কিন্তু তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এখন সরকার সিটি কর্পোরেশনকে
সহায়তা দিচ্ছে।
সভায় পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, চট্টগ্রাম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যে সকল প্রকল্প রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের পথে। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রতিন্ধকতা দূর করা হবে। তিনি বলেন, ওয়াসার বিদ্যমান প্রকল্পে সুয়ারেজ সিস্টেম যেন কর্ণফুলী নদী মুখী না হয়, তাহলে এই নদী দূষণ থেকে রক্ষা পাবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ এমপি বলেন, চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতারই বহি:প্রকাশ। এগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমেই সম্পাদন করতে হবে। তা নাহলে এর সুফল থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতপক্ষেই একটি প্রাকৃতিক শহর। তবে এর নানান অবকাঠামোগত দূর্বলতা রয়েছে। রাস্তাঘাটগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৬ টনের হলেও ৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ী চলাচল করছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমূখী সড়কগুলো একারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। তাই আমার প্রশ্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সাড়ে ৩শ কোটি টাকার বেশি তহবিল থেকে ১ শতাংশ হারে সিটি কর্পোরেশনকে দেবে না কেন? তাদের গৃহকর বাবদ পঞ্চবার্ষিকী কর পূন:মূল্যায়ন হলে সিটি কর্পোরেশনকে দেয় ট্যাক্সের পরিমাণ দাঁড়াতো প্রায় ১ শ ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু দিচ্ছে মাত্র ৩৯ কোটি টাকা। আমি মনে করি এটা চট্টগ্রামবাসীকে বঞ্চিত করার আরেকটি অপপ্রয়াস। তিনি উল্লেখ করেন, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী সহ ঢাকার চার পাশের নদীগুলোর দূষণ রোধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরীর নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনানুযায়ী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে সভাপতি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক মনিরটরিং ও সমন্বয়ের জন্য সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না । তিনি মাননীয় মন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশনের যে ম্যাচিং ফান্ড বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা থেকে যেন চসিককে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, পানি উন্নয়ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান এম.জহিরুল আলম দোভাষ, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল শেখ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ আহমদ তানভীর, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তাহেরা ফেরদৌস, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা
পরিচালক প্রকৌশলী একে এম ফজলুল্লাহ,চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমূখ।