মোহাম্মদ আব্দুল গফুরঃ-
দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালে প্রায় দুই মাস নানা বিধি-নিষেধের আওতায় সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর থাকলেও এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে ৫ দিনের ঘোষিত লকডাউন ভেঙ্গে পড়েছে মাত্র দুইদিনে।
লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার-হাজার মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখাগেছে গত দু’দিনে। বিশেষ করে যানবাহন শ্রমিক ও বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের এই বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখাগেছে।
এদিকে মাত্র দু’দিনে সরকার ঘোষিত লকডাউন অনেকটা ভেঙ্গে পড়ার ৫ টি মৌলিক কারণ চিহ্নিত করে খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা।
এখানে পাঠকদের জন্য বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত লকডাউন ভেঙ্গে পরার ৫ টি কারণ হুবোহুব তুলে ধরা হলো:
১. বাস বন্ধ, প্রাইভেট কার চালু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী বিধি-নিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন থেকে গণ-পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু একই সাথে দেখা গেছে শহর জুড়ে প্রাইভেট কার চলছে। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন পরিবহন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে একটা আশংকা তৈরি হয়েছিল যে ‘লকডাউন’ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে যে ‘লকডাউন’ দেয়া হয়েছিল সেটি প্রায় দুই মাস চলেছে নানা বিধি-নিষেধের আওতায়। এজন্য এবার সে ধরণের পরিস্থিতি মেনে নিতে একবারেই রাজী ছিলেন না পরিবহন শ্রমিকরা।
ফলে দুইদিনের মাথায় সরকারও বাধ্য হয়েছে শর্তসাপেক্ষে বাস চলাচলে অনুমতি দিতে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন যে মানুষের যাতে অফিসে যেতে সুবিধা হয় সেজন্য শর্তসাপেক্ষে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২. কারখানা খোলা, মার্কেট বন্ধ , গার্মেন্টস কারখানাগুলো বরাবরই অন্যসব সরকারি বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে ছিল। ২০২০ সালের লকডাউনেও যখন সবকিছু বন্ধ ছিল, তখন গার্মেন্টস কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়। এবারও শুরু থেকেই গার্মেন্টসসহ শিল্প-কারখানাগুলো বিধি-নিষেধের বাইরে ছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকানের কর্মচারীরা যে বিক্ষোভ করেছে সেখানে তাদের অন্যতম যুক্তি ছিল, যেখানে সব শিল্প-কারখানা খোলা আছে সেখানে শুধু মার্কেট-শপিংমল বন্ধ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে থামানো যাবে?
তাছাড়া গত বছর লকডাউনের কারণে ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারো সে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এজন্য দোকানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
৩. অফিস খোলা, পরিবহন বন্ধ । সরকারি বিধি-নিষেধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশিরভাগ অফিসের নিজস্ব কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই।
একদিকে অফিস খোলা এবং অন্যদিকে রাস্তায় গণ-পরিবহন নেই। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করতে বহু টাকা খরচ হচ্ছে। এনিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভও তৈরি হয়।
৪. বইমেলা খোলা, ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ ।
এবারের লকডাউনে যে বিষয়টি অনেককে বিস্মিত করেছে, সেটি হচ্ছে ঢাকায় বইমেলা চালু রাখা। একদিকে বইমেলা চালু রাখা হয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন দোকান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এদের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও রয়েছেন যারা দৈনন্দিন রোজগারের উপর নির্ভর করেন। ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, বইমেলা চালু রাখলে যদি সংক্রমণ না বাড়ে তাহলে কি তাদের ব্যবসা চলমান থাকলে সংক্রমণ বাড়বে?
৫. সরকারি অফিস সীমিত, বেসরকারি অফিস পুরোদমে সরকারি প্রজ্ঞাপনে যদিও বলা হয়েছে যে সরকারি-বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল দিয়ে কাজ করাবে।
প্রকৃতপক্ষে বেসরকারি অফিসগুলোর জন্য এই নির্দেশনা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে বেসরকারি চাকুরীজীবীদের মনে বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের ক্ষোভ তৈরি হয়।