বোয়ালখালী উপজেলার সরোয়াতলী ইউনিয়নের বেঙ্গুরা গ্রামের ব্যবসায়ী শফিউল আলম চৌধুরী ও তার পরিবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
শনিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এসব জানান ।
সংবাদ সম্মেলনে সরোয়াতলীর সন্ত্রাসী জাহেদুল আলম রাশেদ ও আরিফুল হাসান রুবেল গংয়ের প্রাণনাশের হুমকি, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জায়গা দখলের ষড়যন্ত্র ও তাদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কোরিয়ান ইপিজেডের ব্যবসায়ী মো. শফিউল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সরোয়াতলী ইউনিয়নের বেঙ্গুরা গ্রামের সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং লিডার জাহেদুল আলম রাশেদ, আরিফুল হাসান রুবেলের নেতৃত্বে মো. মাসুদ, মো. রাসেল প্রকাশ মানিক, মো. শাওন, ওয়াহিদুল আলম রিয়াদ, আবুল কালাম বাউন্ডারী ওয়াল করার কারণে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি শহরে থাকি পরিবার পরিজন নিয়ে। ঈদ-কোরবানে বাড়িতে গিয়ে আমরা থাকি। ফলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার বাড়ির বাউন্ডারী ওয়াল ভেঙে, অনেক গ্ছাপালা কর্তন করে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে গুরুতর জখম করে। এরপর ৮ নভেম্বর গভীর রাতেও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাড়িতে গুলি বর্ষণ করে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বাড়িতে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। এসময় তাদের চাহিদা মাফিক চাঁদা দিতে আমি ফের অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমার মাথায় কিরিচ দিয়ে আঘাত করে। এসময় আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার স্ত্রী আসলে তাকেও মাথায় আঘাত করে, আমার ছেলে ইমন ও কন্যা সানজিদা নুরকে কিল, লাথি ও ঘুষি মেরে আহত করে। এতে করে আমার কন্যা সানজিদা নুরের তিন মাসের ভ্রণ নষ্ঠ হয়ে যায়। যার ডাক্তারি কাগজপত্র আমরা থানা ও আদালতে জমা দিয়েছি। তাদের অব্যাহত হামলা, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা শহরে চলে আসার পথেও ৯ নভেম্বর তৃতীয় বারের মতো সিএনজি থেকে নামিয়ে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে।
তিনি আরো জানান, এসব বিষয়ে কয়েকদফা থানায় গেলেও থানা পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। যার কারণে ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। ফলে ৮ নভেম্বর বোয়ালখালী থানা পুলিশ রাশেদ ও রুবেলসহ কয়েকজনের নামে মামলা নিলেও ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি। অপরদিকে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত করার জন্য হস্তান্তর করেন। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী এনায়েত কবীর সেই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে জাহেদুল আলম রাশেদ, আরিফুল হাসান রুবেল গংয়ের অপরাধ এর সত্যতা পেয়েছেন। পরে এ মামলায় আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাজারী করলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ গ্রেফতার করছে না।
এ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, পবিত্র ঈদ উল আযহা সন্নিকটে চলে এসেছে। তারা এখন আবারো হুমকি দিচ্ছে। কোরবানী ঈদের আগে তাদের টাকা দিতে হবে। না হলে আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশ করবে। আমরা এখন ভীত, আতঙ্কিত। তারা আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছে এই বলে যে “ থানা পুলিশ ও কোর্ট তো অনেক করেছোস। তারা তো কেউ আমাদের কিছু করতে পারেনি। ভালো ভালোই আমাদের দাবি মেনে নে , না হলে তুদের কাউকে এবার আর ছেড়ে দিব না। তিনবার ছেড়েছি বলে এবার ছেড়ে দিব, সেটা ভাবলে চলবে না। টাকা না দিয়ে বাড়ি আসলে প্রাণ নিয়ে আর কেউ শহরে ফিরে যেতে পারবি না। গরুর সাথে তুদেরও কোরবানী দিয়ে দিবো”। যার কারণে তাদের ভয়ে গ্রামে যেতে পারছি না। পুলিশও ওয়ারেন্ট থাকার পরও তাদের গ্রেফতার করছে না।
ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করে আমার ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য শফিউল আলম চৌধুরীর জয়নাব বেগম, কন্যা সানজিদা নুরম পুত্র সাইফুল আলম ইমনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি