মো: আরিফ উল্লাহ :-
করোনা ভাইরাস বা ২০১৯-এন সি ও ভি, ১৯৬০ সালে এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছিল, যার ছোবলে দিশেহারা আজ সমগ্র বিশ্ব, আতংকের যেন শেষ নেই, কারণ এই ভাইরাস টিও অন্যান্য ভাইরাস এর মত হাঁচি , কাশি ছাড়াও মুখ, নাক ও চোখে হাত দিলে বা অন্য কোনো উপসর্গের মাধ্যমে এক ব্যাক্তি থেকে অন্য ব্যাক্তির নিকট ছড়াতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে এ ভাইরাস অন্য যে কোনো ভাইরাস থেকে আরো বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু ভয়ের মূল কারণ হচ্ছে এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনও কোনো ধরনের স্পষ্ট ধারনা কেউ দিতে পারেনি এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিস্কার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। যার দরুন আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরের যেকোনো অংশ বিকল হওয়া ও নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার দৃশ্যও আমরা দেখছি। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে পূর্বের ২ টি করোনা ভাইরাসের প্রজাতির ন্যায় এই ভাইরাসের উৎসও কোনো প্রাণী হতে পারে। যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগি মধ্য চীনের উহান শহরে বাজারের আশেপাশে অবস্থান করছিল, তাই মনে করা হচ্ছে ভাইরাসটি কোনো জলজ প্রাণীর ভাইরাসও হতে পারে যা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
গোটা বিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির করোনা ভাইরাস লক্ষণীয়, তার মধ্যে ৬ থেকে ৭ প্রজাতির ভাইরাসের মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হয়ে থাকে। করোনার ২টি প্রজাতির ভাইরাস বিশ্ববাসী দেখেছে, তার মধ্যে ২০০২ -৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম ) আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় ৭০০ জন যার মধ্যে ৩৪৯ জনই হল চীনের,অন্যটি হল মার্স ( মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম ) যা ২০১২ সালে প্রায় ২৭ টি দেশে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে এবং প্রায় ৮০০ এর বেশী মানুষ মারা যায়।
যদি রোগীর শরীরে জ্বর থাকে, এর পর শুকনো কাশি, সেই সাথে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমির ভাব, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, এই ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞবৃন্দ কিছু দিকনির্দেশনা দেন,তাতে বলা হয়, ভালভাবে নিয়মিত হাত ধোয়া, যতটুকু সম্ভব নাক, কান ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকা এবং ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তোলা। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা।
এই ভাইরাস এতটাই ক্ষতিকর যে, চীনের মত একটি দেশে মাত্র কয়েক দিনে প্রায় ১৭০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়, যেখানে ডঃ লিয়াং উডং নামে একজন চিকিৎসক অন্যের রোগ মুক্তির জন্য কাজ করতে করতে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে বরন করে নেন। আর আক্রান্ত ব্যাক্তির সংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০০ জন, এরি মধ্যে এই ভাইরাসটি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ প্রায় ১৪ টিরও বেশী দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতকিছুর মধ্যে সস্থির খবর হল চীনের টোংজির ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ অব হুয়াংজং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে বলে দাবী করেছে, যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি নিশ্চিত করেনি।
আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো খবর শোনা যায়নি কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা শহরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক তরুণী গত ২৭শে জানুয়ারি মারা যায়। এই ঘটনাটি আমাদের সকলকে একটি বার্তা দিয়ে গেল যে, সঠিক পরিকল্পনা মাফিক চলতে না পারলে যেকোনো সময় বড় কোনো দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।
আমরা চাইনা ডেঙ্গুর মত কোনো নির্মম ঘটনার সাক্ষী হতে, চাইনা আর কোনো মৃত্যুর সারি দেখতে। ডেঙ্গু মোকাবেলার মত আর হিমশিম খেতে চাইনা এবং ডেংগুর মত কোনো অসহনীয় পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনা, তাই আমাদের সকলের উচিৎ সরকারের সকল পরিকল্পনাকে সম্মান দেখিয়ে তা অনুযায়ী কাজ করা। সরকারের প্রতি অনুরোধ সকল ক্ষেত্রে তাদের আদেশ অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা, বিমান বন্দরগুলিতে সকল দিক বিবেচনা করা হলেও স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়, নাম মাত্র লিফলেট আর মুখে মুখে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তারা নিজ দায়িত্ব শেষ করে দিচ্ছে, সেই সাথে সীমান্তবর্তি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র সরবরাহ করতে হবে। যতটা সম্ভব বিদেশ যাত্রা কমিয়ে আনা ও চীনে আবস্থানরত শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। অন্যদিকে যদি এই ভাইরাস আমাদের দেশে দেখা দেয় তাহলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে আমাদের চিকিৎসকরা।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের জন্য কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। যেখানে চীনের মত রাষ্ট্রকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে আমাদের কি অবস্থায় পড়তে হবে তা কল্পনাতীত, কারন আমাদের উচিৎ সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি সকল ভেদাবেদ একপাশে রেখে কাধে কাধ মিলিয়ে এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করা কারন ভাইরাস রাজনীতি, ধর্ম আর বর্ণ কিছুই চিনেনা। অন্যথায় আমাদের আরেকটি বার লাশের সারি কাধে নিতে হবে, সাক্ষী হতে হবে কতশত মরা কান্নার। আমরা এমন মর্মান্তিক ঘটনা চাইনা, আমরা চাই সুস্থ থাকতে চাই হাঁসি মুখে জীবন যাপন করতে।