প্রিয় নাছির চাচা,
শতকোটি সালাম লইবেন। গেদু চাচার দূর সম্পর্কের ভাতিজা কেরামত আলী বলিতেছি। আশা রাখি রোজা রমজানের এই মাসে সহি সালামতেই রহিয়াছেন। চাচার আগামী নির্বাচনে অবিশ্যম্ভাব্যি অবলুপ্তি ঘটিবার আশঙ্কা দেখিয়া এই অধম ভাতিজা নিশ্চুপ থাকিবার অবকাশ পাইলাম না। প্রিয় চাচা, নগরীতে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বর্ষা আসিব আসিব বলিতেছে। আর বর্ষা আসিলে নগরীর কি অবস্থা হয় ইহা আপনি স্বয়ং অবগত রহিয়াছেন। এইবার জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করিবে ইহা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হইতেছে। সময় না থাকিলেও দুর্যোগ মুহূর্তে কি করণীয় এখন ইহাই ভাবা সমীচিন। অতীতে অনেক নগরপিতা জলাবদ্ধতা দূর করিবার মনোবাসনা লইয়া চরম হাকডাক করিয়াছিলেন। ইহাতে জলাবদ্ধতা দূর হইল না বটে বরং বর্ষায় নগরী আরো বেশী করিয়া জলে আবদ্ধ হইল। চট্টলবীর প্রিয় মহিউদ্দিন চাচা গত হইয়াছেন। তিনিও ৩ বার কর্পোরেশন কেদারায় বসিয়া জলাবদ্ধতা বিলুপ্তির চেষ্টা করিয়াছিলেন বটে কিন্তু উহাতে কিছু স্থানে সফলতা আসিলেও বেশিরভাগ স্থানেই সমাধান আসে নাই। লাউ লাউ গাছেই রহিয়া গিয়াছে। সাবেক মেয়র সহজ-সরল মন্জু কাকাও জলাবদ্ধতা দূর করিব, জলাবদ্ধতা দূর করিব বলিয়া ঢাক-ঢোল পিটাইয়া বর্তমানে প্রবীণ হইয়াছেন। এবার চাচা চট্টলার গণমানুষ বলুন আর জনমানুষ বলুন সকল আমজনতা আপনার সেবা লইবার আকুল আগ্রহ প্রকাশ করিতেছেন। উহারা দেখিতেছে আপনি জলাবদ্ধতা দূরীকরণে তৎপর হইয়াছেন। সিডিএ-কর্পােরেশন-সেনাবাহিনী মহোদয়দের যুক্ত করিবার চেষ্টা করিতেছেন। যৌথতার সহিত কর্ম সম্পাদন করিবেন আমজনতা ইহা বুঝিয়াছে। কিন্তু চাচা একটা কথা মনে রাখিবেন, শয়নে ভাবিবেন, দিন শেষে ফল-ফলাদির বোঝা আপনার ঘরেই উঠিবে। ফল-ফলাদি পচা হইলে আপনাকেই ইহার স্বাদ আস্বাদন করিতে হইবে, ফল-ফলাদি সুস্বাদু হইলে উহার স্বাদও আপনার আস্বাদন করিতে হইবে। জলাবদ্ধতা দূর করিব, জলাবদ্ধতা দূর করিব বলিয়া সময় ক্ষেপণ করিলে ইহার স্বাদও আপনার আস্বাদন করিতে হইবে। প্রিয় চাচারে, আমি বলিব না আপনি নর্দমা হইতে পলিথিন উৎপাটন করান, নর্দমার গভীরতা আনান, খাল সংস্কার করান, নালা-নর্দমার পাড়ে অবৈধ দালান ভাঙ্গিয়া ফেলান। বলিব না জলাবদ্ধতা ছাড়াও নগরীর নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করিয়া উহা সমাধান করান। কারণ কি করিতে হইবে উহা আপনি ভালই অবগত রহিয়াছেন। শুধু বলিব রশি কোন খুটির সহিত বাধিবেন উহা অবগত হওয়া অপেক্ষা খুটিখানা কোথায় গারিবেন উহা অবগত হওয়া জরুরী। নগরপিতা হিসেবে আপনারও কিছু নিজস্ব মেধা আদান-প্রদান করিতে হইবে, সকলের কথা গ্রাহ্য করিতে হইবে, ইন্জিনিয়ারগণের মতামত গুরুত্ব দিতে হইবে, দ্রুততার সহিত পদক্ষেপ লইয়া দ্রুততার সহিত কর্ম করিতে হইবে। চাচারে আর সময় নাই, নগরীর আমজনতা বলুন আর জামজনতা বলুন সকলেই অস্থির হইয়া উঠিতেছে। তাহারা নির্বাচনের অপেক্ষায় রহিয়াছে। যাহা হউক চাচা কর্পোরেশন সেবকগণের প্রতি আপনার চরম ভালবাসা রহিয়াছে ইহা সকলেরই জানা। কিন্তু চাচা একটু আকাশপানেও চাহিবেন, উহাদের প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র নরম ভালবাসাও প্রকাশ পাইতেছে না তাই উহারাও কলরব করিতেছে। উহারা আর কেহ নহেন, আমাদের মনুষ্য সমাজেরই একনিষ্ঠ প্রতিবেশি কাক সমাজ। যদিও উহারা সময়ে সময়ে মনুষ্য সমাজের মস্তক কেন্দ্র করিয়া পয়নিষ্কাশন সারিয়া লন, মনুষ্য সমাজ ইহাতে বরই বিব্রতবোধ করেন। তবুও বলিব কর্পোরেশনের অর্ধেক কর্ম ইহারাই সামলাইয়া লন। একে অপরকে কা কা বলিয়া সকল আবর্জনা উদরস্ত করিয়া নগর পরিচ্ছন্নতায় ভূমিকা রাখেন। সম্ভব হইলে কর্পােরেশনের সেবকবৃন্দের মত করিয়া উহাদেরও ভাতার ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। ইহা অপারগ-অসম্ভব মনে হইলে নগরীতে কিছু বৃক্ষের চারা রোপণ করিয়া ভরিয়া দিন। ইহা বৃহৎ হইলে কাকষ্য সমাজের আবাসন সমস্যার সমাধান হইবে, মনুষ্য সমাজেরও অক্সিজেনের খোরাক হইবে। যাহা হইক চাচা, ভাতিজার পত্রখানা বিষদ বিশ্লেষণের চেষ্টায় থাকিবেন, গুরুত্ব অনুধাবন করিবেন। নগরীর জলাবদ্ধতা যথাশীঘ্র নির্মূল হইবে এই আশায় বুক বাধিয়া, পথ চাহিয়া আমি ভাতিজা কেরামত আলী আজিকার মত বিদায় লইলাম।
ইতি
ভাতিজা কেরামত