জুনায়েদ হাসান :-
বাংলা সংগীত জগতের তরুণ গীতিকবি এম.এ.আলম শুভ’র পথচলা ও নবীনদের নিয়ে শুভ সকালকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকার ও চায়ের আড্ডায় কথা হয়েছিল এম এ আলম শুভ’র সাথে। নগরীর ঐতিহ্যবাহী আজাদী গলিতে চা খেতে খেতে পথচলার অনেক কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এম.এ.আলম শুভ’র পৈতিৃক নিবাস চট্রগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হারলা গ্রামে । মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তিনি। বাবা মো: নুরুল আলম ব্যাংকার (গ্রামীণ ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার), মা সেলিনা আক্তার স্কুল শিক্ষিকা । তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মেঝো বোন সাবরিনা আলম ইশা এবং ছোট ভাই তৌহিদুল আলম মুন্না । সম্প্রতি তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে এখন চাকুরির প্রত্যাশায় আছেন।
সাক্ষাৎকারে লেখালেখি ও গীতিকবি জীবনের সূচনা নিয়ে শুভ সকালকে এম.এ.আলম শুভ বলেন, লেখালেখির অভ্যাসটা ২০০৯ সালের দিকে শুরু করি। লেখার হাতেখড়ি তেমন একটা ভালো ছিলো না আমার, কিন্ত চেষ্টা করতাম ভালো কিছু লিখতে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতি লিখি টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত। কিন্ত এগুলো শুধু ডায়েরির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো । হঠাৎ মাথায় উদয় হল কবিতা লিখতে পারি যখন , তখন গানও লিখতে পারব, কেন না কবিতার মতইতো গান । কিন্ত গান আর কবিতার ধরন যে এক নয় সেটা বুঝতে পেরেও লেখা শুরু করে দিলাম। কিন্ত সেগুলো আমার কাছে গানের কথা মনে হলেও যারা গীতিকার বা শিল্পী তারা যদি এই লেখাগুলো দেখতো তবে আমাকে দৌড়াতো, তবুও চেষ্টা করতে থাকি। লেখালেখির পাশাপাশি শুরু করে দিলাম বিভিন্ন অনলাইন ও জাতীয় পত্রিকায় আমার লেখা কবিতা, ছোট গল্প ছাপানো এবং পাশাপাশি রিপোর্ট করা। বর্তমানে আমার নিজস্ব একটি অনলাইন পত্রিকা রয়েছে যার সম্পাদক আমি নিজেই। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি ।
গান লেখার বিষয়ে কার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুভ বলেন, আমি প্রথম আমার বাবার কলিগ শিল্পী প্রফুল্লা রঞ্জনকে আমার গান লেখার ব্যাপারে কথা বলি। তারই সূত্র ধরে একদিন একটি গানের রেকর্ডিং স্টুডিওতে আমাকে নিয়ে গেলেন শিল্পী প্রফুল্লা রঞ্জন আংকেল । চট্টগ্রামের একজন সিনিয়ন শিল্পী মাহমুদ খান খুবই সাধাসিধে একজন মানুষ। তিনি সবেমাত্র ভোকাল দিয়ে ওয়েটিং রুমে আসেন। আমি মাথা নিচু করে বসেছিলাম কারন নতুন পরিবেশ, কাউকে চিনি না। পরিচয় দেবার মত তেমন গীতিকারও আমি তখনো হয়ে উঠিনি বা যোগ্যতাও আমার ছিলো না। মাহমুদ খান আংকেল নিজে আমাকে আংকেল বলে কাছে ডেকে নিয়ে বসালেন । উনাকে আমি আমার সব কথা বললাম এবং আমার কথা শুনে তিনি আমার ফোন নম্বর নিলেন। তিনি হয়তো আমার গানের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা বুঝতে পেরেই আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন সেদিন।
গানের তাল ও ছন্দের হাতেখড়ি সম্পর্কে এম.এ.আলম শুভ বলেন, আমি যখন গান লিখতাম তখন জানতাম না গানেও তাল-ছন্দ-মাত্রা প্রভৃতি আছে। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মাহমুদ খানের হাত ধরে সংগীত জীবন শুরু আমার। গানের অর্থ, কথা সবকিছু জ্ঞান লাভ করি মাহমুদ খানের মাধ্যমে। আমার গান লেখার পেছনে তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না ।
নতুনদেরতো এ জগতে আসা কষ্টসাধ্য সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শুভ বলেন, আমার যখন গান শেখা হয়ে গেলো তখন মাথায় আসলো এখনতো আমার পরিশ্রম সার্থক করতে হলে কাউকে দিয়ে গান গাওয়াতে হবে। এখন নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করার পালা । শুরু হল একজন দু’জন এবং বহুজনের কাছে যাওয়া, নতুন বলে কেউ পাত্তা দিলো না আমাকে। অনেক হেঁটেছি, বহু অনুরোধ করেছি, কে শোনে কার কথা আমি যে নতুন । আমার কাছেতো টাকা নেই। আমি ব্যর্থ, বালিশ জড়িয়ে কতটা কেঁদেছি শুধু আমার রাত জানে। মানুষ আমাকে নিয়ে কত না হাসাহাসি করেছে, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজনরাও বাদ যান নি। অনেকবার ভেবেছি মরে যাবো, তাও মানুষের হাসির পাত্র হয়ে বেচে থাকার কোন মানে হয় না।
দু:সময়ে আপনার পাশে কে ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে এম এ আলম শুভ বলেন, আমার কিছু বন্ধু দু:সময়ে আমার পাশে ছিল। সবসময় আমাকে উৎসাহ দিতো আমার ছোট বোন ইশা, বন্ধু আমিন, সাকী, ছোট ভাই রায়হান । কিন্ত প্রথমদিকে বাবা-মা সাপোর্ট না করলেও এখন সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেন। বর্তমানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্যার, ম্যাম খুব সাপোর্ট করছেন, সেই সাথে বর্তমানে সবার খুব সাপোর্ট পাচ্ছি।
প্রথম গান সম্পর্কে এম এ আলম শুভ বলেন, ২০১৫ সালের শেষদিকে আমার প্রথম গান রেকর্ডিং হয় ‘‘ একুশ তুমি’’ । মম রহমানের সুর, সংগীত এবং কন্ঠে। প্রথম গান রিলিজের পর অনেক উৎসাহ পেলাম। আজ এত দূর যা এসেছি আমার নিজের যোগ্যতা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে । যাদের কথা না বললেই নয় শিবলু, অনিম খান, শামিম আশিক ভাইদের সহযোগিতায় মূলত গানের জগতে প্রবেশ করা আমার।
বর্তমানে রিলিজকৃত গানের সংখ্যা কত প্রশ্ন করা হলে শুভ বলেন, আমার নিজের লেখার যোগ্যতা দিয়ে আজ আমি এত দূর এসেছি । কাজ করেছি ১৮টি এ্যালবামে এবং প্রায় অর্ধশতাধিক গান রিলিজ হয়েছে । রিলিজের মিছিলে রয়েছে প্রায় ত্রিশটিরও অধিক গান, একাধিক বিজ্ঞাপনে কাজও করেছি । সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো আমার গানও ফিল্মে ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে একুশ তুমি, আমার চোখে, জানে হৃদয়, কতনা তোকে ভালবাসি, প্রত্যাবর্তন, ছুয়ে দিলে আমায়, প্রেম, কতনা তোমায় ভালবাসি, মনের খামে, আমার চোখে, অবুঝ আমি, লুকোচুরি, ক্রাশ, ভুল করে প্রভৃতি গান এখন মানুষের মুখেমুখে । আসছে ঈদুল ফিতরে আমার বেশ কিছু গান মায়াবি চোখ, প্রেমের আকাশ, অচেনা সুখ, কান পেতে রয়েছি, প্রিমিয়ার থিম সং, উড়ু উড়ু মন-২, তোর নামে ইত্যাদি মুক্তি পাচ্ছে। যেগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন স্যাম মিশু, তামিম, স্বর্ণা, দৃষ্টি আনাম, মাহদীসহ অনেকে।
সংগীত জগতে সফলতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই জগতে প্রথমে অবহেলা পেলেও এখন অনেক মানুষের সম্মান আর ভালোবাসা পাচ্ছি, সবার ভালবাসা নিয়ে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই, যারা আমার পাশে ছিলেন এবং আছেন আর থাকবেন তাদের সবাইকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ভালোবাসা। মন থেকে যদি কিছু চান তা চেষ্টা করুন পেয়ে যাবেন, এভাবে আজ আমি গীতিকার এম.এ.আলম শুভ। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি সফল।
নতুনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও নতুন ছিলাম। নতুন হলে শিল্পী, সুরকার এবং সঙ্গীত জগতের প্রত্যকের কাছে গেলে জীবনে গান লেখার আশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হয়, নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। একটি জনপ্রিয় গানের বাবা কিন্ত একজন, গীতিকার নতুন হলে তো কথাই নেই, তাকে তার প্রাপ্য সম্মানি দিবে দূরের কথা বরং তার কাছে উল্টো টাকা আদায় করা হয়। আমার নতুন গীতিকারদের কাছে পরামর্শ হবে আপনি গান লিখে যান একদিন সুযোগ আসবেই। আর কখনো টাকা দিয়ে গান গাওয়ানোর কোন দরকার নেই। ভালো লিখলে আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান দিয়েই গান নেবে । সবশেষে সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার লেখা গান শুনবেন এবং তার জন্য দোয়া করবেন।