মোঃ আলী :-
শিশুদের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজন অন্তর্ভূক্তিমূলক গণমাধ্যম। শিশুদের দাবি-দাওয়া মেটানো শুধু বাধ্যতার কাজ নয়, এর অর্থনৈতিক অর্থও রয়েছে। যেসব দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, তারা শিশুদের পেছনে উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয় করেছে। প্রকৃতপক্ষে, শিশুদের জন্য বিনিয়োগ না করার ফলে যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি, তা শিশুদের অধিকার পূরণ করার ব্যয়ের চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি।
শিশুদের ভোটাধিকার না থাকায় তারা এমন মানুষদের উপর নির্ভর করে যারা তাদের অধিকারকে সম্মান করা, সংরক্ষণ করা ও পূরণ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই মানুষগুলো হলেন:সকল পর্যায়ের নেতা, সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, সরকারি চাকুরিজীবী, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা, বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সমাজকর্মী, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও আরো অনেকে।
শিশুরা তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনা। কিন্তু তারা তাদের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভর করে।
সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা আইন ও নীতি প্রণয়নে, এসব আইন ও নীতিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেয়া এবং তারা যে জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের পক্ষে তদারকি করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শিশুরা বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষক, সমাজকর্মী , ধর্মীয় নেতা, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যম পেশাজীবি এমন ব্যক্তিবর্গের উপরও নির্ভর করে যারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ।
গণমাধ্যম সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং শিশুদেরকেও তাদের চিন্তার বিন্যাসে সহায়তা করে।
এটা প্রমাণিত যে, শিশুরা মিডিয়ার ভোক্তা কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সব সময় তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকেনা। মূলধারার মিডিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে, মিডিয়া প্রোগ্রাম তৈরিতে তাদেরকে প্রভাবিত করতে হবে এবং এতে করে মিডিয়াতে তাদের কথা বলার সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত সামাজিক উন্নয়নে তারা শক্তিশালী হবে।
তবে, কিছু কারণে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ মিডিয়াতে তাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এর কারণগুলো হলো: সামর্থ্যরে ঘাটতি, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, জ্ঞানের ঘাটতি অর্থাৎ শিশুদের যথাযথ, নৈতিক ও উৎপাদনশীল কাজে অংশগ্রহণ করানোর জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব।
বাংলাদেশে ‘সংবাদ সাক্ষরতা’ তুলনামূলকভাবে নতুন ধারণা। পাঠকরা যখন কোনো তথ্য বা সংবাদকে নৈতিকতা ও যৌক্তিক দিক থেকে মূল্যায়নের বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে তখন তারা সংবাদটির দায়িত্বশীলতা ও সত্যতার বিষয়টি দাবী করতে সক্ষম হবে।
শিশুদের বিষয়গুলি গণমাধ্যমে মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিফলিত হয়। এই শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম বলে মনে করছি।