মোঃ আরিফ উল্লাহ, (কক্সবাজার) :-
অপার সম্ভাবনার এক নাম বিশ্বের দীর্ঘতম বালুময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, যার ফলে কক্সবাজারের অর্থনীতির চাকা সর্বদা সচল রয়েছে, কিন্তু আমাদের অবহেলা আর অসচেতনতার কারণে এই সম্ভাবনাময় খাত টি কে আমরা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। এই অবহেলার কারণে আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে কুড়াল মারছি তা আমাদের কারোই জানা নেই, আমরা হয়তো ভাবছি এই সামান্য কাজে কিছুই হবেনা, কিন্তু আমাদের এই ছোট ভুলের কারণে কারো কাছে আমাদের দেশের সম্মানহানী হতে পারে, এমন ছোট ছোট ভুলের সমন্বয়ে হতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করছি ঝাউবন, সারাদিন বিন্দাস ঘুরা ফিরা, ছবি তোলা ও খাওয়া দাওয়া করে সন্ধ্যায় ওয়ান টাইম খাবারের পাত্র, টিস্যু, খাবারের অবশিষ্টাংশ ও সকল প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলে চলে যাই। যার ফলে সুন্দর পরিবেশ আর সুন্দর থাকেনা, মশা, মাছি সহ বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়, সেই সাথে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এর ফলে অন্য পর্যটকেরা নেতিবাচক অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
শুধু তাই নয়, এর ফলে একজন মানুষের কয়েক বছরের লালিত স্বপ্নেও আঘাত হয়, অনেক মানুষের লালিত স্বপ্ন সে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে যাবে, সমুদ্র স্নানের স্বাদ নিবে, ঝাঊ বাগানের সরু পথ ধরে হেটে যাবে কিন্তু আমরা যদি আমাদের অবহেলা অব্যাহত রাখি তাহলে এমন স্বপ্নবাজ মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পরবে।
এই চিত্র টি বেশী লক্ষনীয় হয় কবিতা চত্বর মোড়ে ও শৈবাল সড়কে। অন্যদিকে এর থেকেও ভয়াবহ অবস্থা দেখা যায় মেইন বীচ থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত, ডাবের পানি পান করার পর এর অবশিষ্টাংশ, পলিথিন, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরণের বোতল, খাবারের প্যাকেট, পুরাতন কাপড়, যা দেখে একজন পর্যটকের মনে আমাদের প্রশাসন ও আমাদের দায়িত্ব ও রুচি নিয়ে প্রশ্ন অবশ্যই আসবে।
জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সমুদ্রের তীর ঘেঁসে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয় আর আমরা এই সুযোগের পূর্ন অপব্যবহার করেই চলেছি, গাড়িতে বসে চিপস, চানাচুর, টিস্যুর প্যাকেট, বিভিন্ন পানীয়ের প্লাস্টিকের বোতল ফেলছি, ভাবছি একটা বোতলে আর এত বড় সমুদ্রে কি হবে? আমরা এটা ভাবতে চাই না যে, এখানে না ফেলে সামনে ডাস্টবিন সেখানটায় ফেলব। এর ফলে সমুদ্রের পানি যেমন দূষিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে ঠিক তেমনি দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে আমাদের ভাব মূর্তি বৃদ্ধি পাবে।
যে কথা না বল্লেই নয়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিভিন্ন ধরণের পর্যটক আকষর্নীয় কাজ করে চলেছে, তাই তাদের ধন্যবাদ না দিলেই নয়। দরিয়ানগর থেকে ইনানী বীচ পর্যন্ত প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুটিতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাহারি রঙ্গের কারুকাজ করেছে যা মেরিন ড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আমরা বরাবরই নিজেদের অসচেতনতার পরিচয় দিয়ে আসছি, এই সুন্দর নকশাগুলির উপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনসমাবেশের পোষ্টার লাগিয়ে এই নকশার সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছি, সেই সাথে প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের ছিন্তাই ও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে হয়।
যেখানে বর্তমান সরকার ও কক্সবাজারের বিভিন্ন দপ্তর কক্সবাজারকে পর্যটক বান্ধব করার প্রচেষ্টায় প্রায় ৩০ টির বেশী প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার অধিকাংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং কিছু প্রকল্প শেষ, যার সম্ভাব্য খরচ প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। যার ফলে পাল্টে যাবে কক্সবাজারের দৃশ্য, কিন্তু ঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতরা। উপরোক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের উচিৎ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, পরিকল্পিত নগরায়ন, ঝুকিপূর্ন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক সাইন বোর্ড ব্যবহার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে সকল কাজ করা হচ্ছে তার পর্যবেক্ষনের জন্য আলাদা টীম গঠন করা। পর্যটন বান্ধব সমুদ্র সৈকত ও পর্যটক বান্ধব পরিবেশ নিশ্চত করতে পারলে আমরাও হতে পারবো বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্য দেশ।